জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জুলিও কুরি পদক প্রাপ্তির পঞ্চাশতম বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে বঙ্গবন্ধুর হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। ১৯৭১ সালে বাঙ্গালী জাতির অবিসংবাদিত এ নেতার নেতৃত্বে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এর মাত্র দুবছর পর বিশ্বশান্তি পরিষদ আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ পদকে ভূষিত করে।
বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রায় ২০০ সদস্যের উপস্থিতিতে ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন, আর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুকে এ পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলন এবং বিশ্বশান্তির সপক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর নাম প্রস্তাব করেন। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে ন্যায্য কারণেই বিশ্ব শান্তি এবং স্বাধীনতার লড়াইয়ে অবদান রাখার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জুলিও কুরি শান্তি পদকের মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।
এরই প্রেক্ষিতে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির গ্রিন রোডের ক্যাম্পাস অডিটোরিয়ামে আজ মঙ্গলবার (২৩ মে) শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তির উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সহকারী লাইব্রেরিয়ান মো: মাসউদ মিয়ার পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটির উপাচার্য প্রফেসর ড. মো: আবুল বাশার এবং প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো: সাজ্জাদ হোসেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রাপ্তির ৫০ বছর পূর্তির ওপর বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর শামীম আরা হাসান, প্রাক্তন ট্রেজারার ও ব্যবসায় প্রশাসনের প্রফেসর মো: আল-আমিন মোল্লা ।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এম এ মাবুদ, সিএসই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান বুলবুল আহমেদ, এমই বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো: মোস্তফা হোসেন, ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক কাজী জুলকারনাইন সুলতান আলম। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনায় ছিলেন রেজিস্ট্রার এস, এম, নূরুল হুদা।
প্রধান অতিথি হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো: সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিনি ছাত্র ছাত্রীদের আমাদের জাতি, দেশ, পৃথিবীর রাজনীতি নিয়ে গবেষনা করতে বলেন। আমাদের দূর্ভগ্য আমরা বঙ্গবন্ধুকে ধরে রাখতে পারিনি। বিশ্বে আমরাই একমাত্র জাতি যেখানে প্রথমিক থেকে হাইয়ার এডুকেশন পর্যন্ত খুব সামান্য টাকায় পড়াশুনা করা যায়। আমি ধন্যবাদ জানাই বেসরকারি ইউনিভার্সিটি পরিবারকে যারা করোনা কালে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নিয়েছে। আমাদের সম্পদের পরিমান কম, যুদ্ধের কারনে দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতি হচ্ছে। নিজেরা দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও ১১ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে আমরা জাতি হিসেবে মহত প্রমান করেছি।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে নিয়ে গেছেন যার কারনে অনেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। আজ আমরা নিজস্ব স্যাটেলাইটের মালিক। আমাদের হয়ত কিছু গ্যাপ আছে কিন্ত আমরা অনেক এগিয়ে যাচ্ছি। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের অনুপ্রানিত হতে হবে।
১৯৫০ সাল থেকে ‘জুলিও কুরি’ পদক দেয়া শুরু হয়। মূলত সাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা এবং মানবতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, তারা এ পদকে ভূষিত হয়ে আসছিলেন। বঙ্গবন্ধু এ পদকপ্রাপ্তির আগে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, ভিয়েতনামের সংগ্রামী নেতা হো চি মিন, চিলির গণআন্দোলনের নেতা সালভেদর আলেন্দে, ফিলিস্তিনের জনদরদি নেতা ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ এ পদক পেয়েছিলেন।