বুধবার (১১ মে) বঙ্গবন্ধু পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুল ওয়াদুদ ও যুগ্মসাধারণ সম্পাদক ডাক্তার শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন-এর নেতৃত্বে একদল প্রতিনিধি দল ছাত্রলীগ নেতা টিপু সুলতানকে দেখতে পঙ্গু হাসপাতালে যান। এ সময় তারা টিপুর চিকিৎসার খোঁজখবর নেন ও হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন। নেতৃবৃন্দ টিপুর চিকিৎসার ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।
ফিকামলি তত্ত্বের জনক, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. আব্দুল ওয়াদুদ সাংবাদিকদের জানান, টিপুকে নিয়ে বাংলাভিশনের সংবাদ দেখার পরপরই তিনি টিপুর চিকিৎসার ব্যয়ভার নিতে এগিয়ে আসেন, অনেকেই টিপুকে দেখতে এসেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী টিপুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন, খোঁজ খবর রাখছেন- এটা একজন কর্মীর জন্য খুবই সন্তুষ্টির বিষয়; শোকর আলহামদুলিল্লাহ। বঙ্গবন্ধু কন্যার মহানুভবতা ও কর্মীদের প্রতি ভালোবাসা দেখে অভিভূত না-হয়ে থাকা যায়না।
উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. আব্দুল ওয়াদুদ ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে যদি তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সব খোঁজখবর একাই রাখতে হয়, তাহলে এত নেতা-কর্মী, স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের জন সম্পৃক্ততা ও দায়িত্ববোধের বিষয়ে বিরাট প্রশ্ন থেকে যায়। তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে আরও কর্মীবান্ধব হওয়ার আহ্বান জানান। টিপুর চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার দায়িত্ব ছিল নাটোর জেলার নেতা-কর্মীদের। কিন্তু সাহায্য-সহযোগিতা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর মনোভাব পোষণ না-করা এবং বলা যায় তাদের অবহেলার কারণেই চিকিৎসার খরচ জোগাতে টিপু ঢাকাতে এসে রিকশা চালাতে বাধ্য হয়েছে। ঢাকা পর্যন্ত কেন তাকে আসতে হবে? স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতৃবৃন্দের কোন দায়িত্ব কি ছিল না! কর্মীরা যদি এভাবে অবহেলিত হয় তাহলে তারা কেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলীয় কর্মসূচি সফল করবে? টিপুর বিষয়টা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সকল নেতাকর্মীর জন্য একটা লজ্জাজনক ও গ্লানিকর ঘটনা। সময় এসেছে, যারা দুঃসময়ে কর্মীদের পাশে থাকে না এমন সুবিধাবাদী হাইব্রিড নেতাদের থাবা থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে মুক্ত করার।’
সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ড. আবদুল ওয়াদুদ আরও বলেন, ‘জনগণের মন-মানসিকতা, চাহিদা, প্রয়োজন, সর্বোপরি জনগণের প্রত্যাশাকে বুঝে এবং বিবেচনায় নিয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্ব কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন এবং জনগণের ন্যায্য দাবি আদায় ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানবসেবা ও সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখবেন- সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে এমনটাই প্রত্যাশা করে। অথচ, বঙ্গবন্ধুর আজকের বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতাদের কথাবার্তা, চালচলন, ভাবভঙ্গি ও বিলাসিতা দেখলে সবার মনে প্রশ্ন জাগে- বঙ্গবন্ধু কি এমন নেতৃত্ব, এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? বঙ্গবন্ধু সব সময় সাধারণ মানুষের পাশে থেকে, তাদেরকে নিয়ে, তাদের জন্য রাজনীতি করেছেন; সুখে দুখে তাদের পাশে থেকেছেন, নিজের সাধ্যমত সাহায্য সহযোগিতা করেছেন। সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট, দুর্দশা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক পশ্চাদপদতা বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতেন।
সামাজিক পশ্চাদপদতা ও অসংগতি তাকে ভাবিয়ে তুলতো। তাই, গণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের বিষয়টিকে তিনি রাজনীতির মূল লক্ষ্য হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের দুর্দশা ঘুচিয়ে সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে তুলতে। কর্মীবান্ধব বঙ্গবন্ধু নেতাকর্মীদের যেকোনো প্রয়োজনে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেন। ছাত্রলীগ নেতা টিপুর ঘটনা একক কোনো ঘটনা নয়। টিপুর মতো এরকম শত শত টিপু আছে, যাদের দুঃসময়ে বর্তমান কালের নেতারা পাশে থাকে না। মিডিয়ার কারণে হয়তো টিপুর বিষয়টি সামনে এসেছে। এই ঘটনা থেকে আমাদের নেতাদের অনেক কিছু শেখার আছে। যারা আদর্শিক রাজনীতি করে তাদের আরও কর্মীবান্ধব হওয়া বাঞ্ছনীয়। নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত নেতাদের সময় থাকে না- বিপদগ্রস্ত কর্মীদের খবর নেবার। কর্মীরা নেতাদের কর্মচারী নয়, কর্মীরাই নেতা তৈরি করে। যে সব নেতারা নির্যাতিত-নিপীড়িত কর্মীদের পাশে থাকতে পারে না তাদের রাজনীতিকে অপরাজনীতি বলাই শ্রেয়। নিজ দলের কর্মীদের দুর্দিনে যে সব নেতারা খোঁজ খবর নেয় না, পাশে থাকেনা, উপকারে আসে না, তারা কীভাবে জনগণের ভাগ্য উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করবে! মুজিব আদর্শের লেবাসধারী এসব রাজনীতিবিদদের বিষয়ে দলের সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। টিপুর ঘটনা স্থানীয় রাজনীতির সমন্বয়হীনতা ও কর্মীদের সঙ্গে নেতাদের যোগাযোগহীনতা ও দূরত্বের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে। আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডের এসব ঘটনায় দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সময় এসেছে। আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করে দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিতে তিনি নেতা কর্মীদের আরও ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান।’
হাসপাতাল ত্যাগের পূর্বে বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে টিপুর পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।