রাজধানীর শান্তিনগরে রোববার বিকেলে গুলিবিদ্ধ হওয়া মানিক মিয়া (৪৫) ছিনতাইকারীর গুলিতে আহত হননি। তিনি পরিবহন নেতা ইসমাইল হোসেন ওরফে বাচ্চুর লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এদিকে ইসমাইল ঘটনাটিকে ছিনতাই বললেও পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, ঘটনাটি ঘটেছে ইসমাইলের নিজ বাসায়। ছিনতাই নাটক সাজিয়ে বিষয়টিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করেন ইসমাইল। মানিক ইসমাইলের পরিবহন ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। তবে কি কারণে মানিককে গুলি করা হয়েছে কিংবা তিনি কিভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, সেটি এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। রবিবার দিবাগত রাত ২ টার দিকে এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ মানিকের স্ত্রী সাজেদা আক্তার বাদী হয়ে রমনা থানায় মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় ইসমাইল ও মহিউদ্দিনকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
মামলাটি দায়ের করার পরপরই তদন্তের দায়িত্ব পান সিদ্ধেশ্বরী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মাসুম। পরে মামলাটি তদন্তের দায়িত্বভার ডিবিকে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে এসআই মাসুম বলেন, মামলায় তথ্য গোপন, আলামত নষ্ট করা এবং ঘটনা ভিন্নখাতে নেওয়ার অভিযোগ আনেন বাদী। তবে বাদীও নিশ্চিত নয় যে, কেন কিংবা কিভাবে তার স্বামী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
রোববার বিকেলে শান্তিনগরের কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির পাশে ট্রাফিক অফিস গলির ইসমাইলের বাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর ইসমাইল নিজেই বাসা থেকে গুলিবিদ্ধ মানিককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন ইসমাইল জানান, মানিক তার পরিচিত। মানিকও পরিবহন নেতা ছিলেন। ওই গলিতে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। সেদিক দিয়ে মালিবাগে যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন মানিক। তিনি খবর পেয়ে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ইসমাইল শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি। ওই ভবনের একটি ফ্ল্যাটে ইসমাইল ও মহিউদ্দিন থাকেন। ইসমাইলের পরিবারের সদস্যরা থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। ইসমাইল পরিবহন শ্রমিকদের রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত। তার পরিবহন ব্যবসা রয়েছে। সেসব ব্যবসা দেখাশোনা করতেন গুলিবিদ্ধ মানিক। মানিক যাত্রাবাড়ীর দনিয়া এলাকা থাকেন। তবে প্রায় প্রতিদিন বেইলি রোডের পাশে লেক ভিউ অ্যাপার্টমেন্টে ইসমাইলের বাসা যেতেন। রোববারও দুপুরের পরপর সেখানে যান। এরপর বিকালের দিকে তাকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কোলে করে নিচে নামাতে দেখেন বেশ কয়েকজন।
লেক ভিউ অ্যাপার্টমেন্ট ভবনটির তত্ত্বাবধায়ক রমজান আলী বলেন, বিকালের দিকে তিনি গুলির শব্দ শোনেননি। এর কিছুক্ষণ পর মানিককে আহতাবস্থায় নিয়ে যেতে দেখেন। কিন্তু কিভাবে মানিক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, সেটি তারা কেউ নিশ্চিত নয়।
ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় রমনা থানা পুলিশ ও ডিবি রমনা জোনের একটি টিম। কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি ও আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিয়ে এ ধরনের কোনো ঘটনার সত্যতা পায়নি। পরে সন্ধ্যার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ইসমাইলকে আটক করে পুলিশ। তাকে নিয়ে বাসায় গিয়ে উদ্ধার করা হয় তার লাইসেন্স করা পিস্তল। এসময় আটক করা হয় তার সহকারী মহিউদ্দিন রুবেলকে। জব্দ করা হয় একটি প্রাইভেটকারও।
ডিবি বলছে, ইসমাইল শুরুতে পুলিশকে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয়। তবে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইসমাইল দাবি করেন, তার লাইসেন্স করা পিস্তল পরিষ্কার করছিলেন সহকারী মহিউদ্দিন। এ সময় অসাবধানতাবশত পিস্তল থেকে গুলি বের হয়ে ঘটনাটি ঘটে। তবে মহিউদ্দিনও একই সুরে কথা বললেও এ ধরনের বক্তব্য সাজানো নাটক বলে মনে করছে ডিবি।
ডিবির রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মিশু বিশ্বাস বলেন, বাসা থেকে গুলিবিদ্ধ মানিককে হাসপাতালে নিয়ে যান ইসমাইল। পরে এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে তিনি ছিনতাইয়ের নাটক সাজান। কিন্তু এটা ছিনতাইয়ের ঘটনা নয়। গ্রেপ্তার দুজনকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারলে আসল রহস্য বের করা যাবে।
এদিকে বাম পাজরে গুলিবিদ্ধ ইসমাইল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে তার স্ত্রী সাজেদা আক্তার জানান, গুলিটি লেগে বের হয়ে গেছে। এখনো শঙ্কামুক্ত কিনা সেটি নিশ্চিত নয়। তবে আরও কয়েকদিন হাসপাতালে থাকতে হবে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।