এবার ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পরিসর বেড়েছে। গতবারের চেয়ে স্টল, প্যাভিলিয়ন বেড়েছে প্রায় ১০০টি। সেসঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণও বেড়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অব্যবস্থাপনাও। তিন দিন আগে মেলা উদ্বোধন হলেও এখনো মেলা প্রাঙ্গণে যত্রতত্র বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। যা মেলায় আসা দর্শনার্থীদের বিরক্তির উদ্রেগ করছে। তবে দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি ভোগাচ্ছে টয়লেটের অব্যবস্থাপনা। দুর্গন্ধে মেলার টয়লেটে যাওয়া দর্শনার্থীদের জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অপরিচ্ছন্ন এসব টয়লেটের মেঝেতে পানি জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে গেছে। সাংবাদিকদের জন্য বরাদ্দকৃত কক্ষটিও অপরিচ্ছন্ন। কক্ষটি মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়নের কর্মচারীদের ডাইনিং রুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে গেলে এসব অব্যবস্থাপনা দেখা যায়।
ঢাকার খিলগাঁও থেকে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল মেলায় এসেছেন আফরোজা বেগম। তিনি বলেন, এবার মেলায় দোকানপাট বেশি। তবে মেলা প্রাঙ্গণে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বেশ অভাব। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগী। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ। নাকে রুমাল দিয়ে তা ব্যবহার করতে হয়। গাজীপুর থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী মানসুরা জান্নাত মনিমা বলেন, ঢাকা বাইপাস সড়কের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। এ সড়ক ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে। যানবাহন চলছে ধীরগতিতে। ফলে দর্শনার্থীদের মেলায় আসতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সড়কে প্রতিনিয়ত পানি ছিটানো প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
মেলা ঘুরে দেখা গেছে, এখনো অনেক স্টল ও প্যাভিলিয়নে রং ও সাজসজ্জার কাজ চলছে। তবে শিশুদের জন্য বিনোদন, খাবারের হোটেল, শীতের কাপড়, বঙ্গবন্ধু কর্নার, কসমেটিকস, ইলেকট্রনিকস, হারবাল, আসবাবপত্র, আচার, রুটি মেকার, অ্যালুমিনিয়াম, কার্পেট, গৃহস্থালির পণ্যসহ অধিকাংশ স্টল প্যাভিলিয়ন এখন প্রস্তুত। বড় বড় প্যাভিলিয়নগুলো দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানো হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আগামী শুক্রবার থেকে মেলা জমবে বলে আশা করছেন। সেভাবে তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। এখন মেলায় আসা দর্শনার্থীদের অধিকাংশই স্থানীয় বাসিন্দা। তারা মেলায় ঘোরাফেরা করলেও কেনাকাটায় আগ্রহ কম। উদ্বোধনের পর গত দুই দিনের তুলনায় গতকাল মেলায় লোকসমাগম হয়েছে বেশি। তবে কেনাবেচা তেমন শুরু হয়নি। এদিকে স্টলগুলোতে নানা ছাড় ও অফার থাকছে প্রথম দিন থেকেই। ঢাকার মিরপুর থেকে আসা সাইফুল ইসলাম বলেন, সময় মতো মেলা জমাতে হলে মেলার স্টল ও প্যাভিলিয়ন নির্মাণের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন।
আয়োজকরা জানিয়েছে, এবার মেলায় দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য দুটি হলের ভেতরে-বাইরে মিলে মোট ৩৩১টি স্টল, প্যাভিলিয়ন ও মিনি প্যাভিলিয়ন রয়েছে। মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য সার্টল সার্ভিসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কুড়িল বিশ্ব রোড থেকে এক্সিবিশন সেন্টার পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে ৭০টি বিআরটিসি বাস চলাচল করছে। প্রয়োজনে এ সংখ্যা আরো বাড়ানো হবে। বাসের ভাড়া ৩৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। মেলা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। তবে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন রাত ১০টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। এবারে মেলায় প্রবেশ মূল্য প্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ৪০ টাকা এবং অপ্রাপ্ত বয়ষ্কদের জন্য ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। মেলার টিকিট অনলাইনে কিনলে ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্টের সুযোগ থাকবে। মেলায় প্রায় ১ হাজার গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।