প্রায় সবার মনেই একটা ভীতি কাজ করে, আমি টেকনিক্যাল ব্যাকগ্রাউন্ডের না হয়েও কি করে আমি প্রোগ্রামিং মতো অসাধ্য বিষয়কে আয়ত্তে নিয়ে ফ্রীল্যান্সিং করবো। এইসব ভীতি জয় করে উঠা একজন হলেন ঢাকার চম্পা হোসেইন। ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতকোত্তর শেষ করে চম্পা যোগ দেন একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে IGCSE ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে।
চাকুরীতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে করোনা মহামারীর প্রবল থাবায় সবকিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়েছিলো। বাসায় বসে অবসর সময়কে কাজে লাগানোর দৃঢ় মনোবল নিয়ে ভর্তি হয়ে যান, বাংলাদেশের অন্যতম স্কিল ডেভেলপমেন্ট প্লাটফর্ম “শিখবে সবাই” এর ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট কোর্সে। অনলাইনে ঘরে বসে নিয়মিত ক্লাস এবং মেন্টরের নির্দেশনা অনুযায়ী এসাইনমেন্টগুলো করতে থাকেন চম্পা। তার কঠোর পরিশ্রম, অধ্যাবসায় এবং নিজেকে নতুন ভাবে প্রমাণ করিয়ে দেবার প্রবল ইচ্ছা শক্তিতেই আজ সফল ওয়েব ডেভেলপার ফ্রীল্যান্সার চম্পা।
চম্পা জানান, “আমার শুরুটা ছিল ভিন্ন ধরনের। এমন নয় যে আমার চাকরি বা ডিগ্রি ছিল না। আমি ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ সম্পন্ন করেছি এবং উপার্জন বেশ ভাল ছিল। কিন্তু আপনি জানেন যে আপনার ভিতরে এমন কিছু আছে, যেখানে আপনি মনে করেন যে আপনি সম্পূর্ণ হননি। তারপর অবশেষে যখন আমরা লকডাউনের অধীনে ছিলাম, তখন সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। সেই সময়ে আমি আমার নতুন ক্যারিয়ারের জন্য চেষ্টা শুরু করি। এটাও সত্য যে কিছু লোক আমাকে নিন্দা করেছে যে এটি সময় এবং অর্থের নিছক অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। অনেক দেরি হয়ে গেছে।
আমি বিশ্বাস করি “কখনো দেরি হয় না। আমরা যা শুরু করতে চাই তা শুরু করার জন্য সর্বদা সময় থাকে”। এর অর্থ হচ্ছে, “যত দেরি হোক তা বিবেচ্য নয়, একজন ব্যক্তির সর্বদা তাদের লক্ষ্যগুলি অনুসরণ করার সুযোগ নেওয়া উচিত।”
এই মতাদর্শকে শক্তি ভেবে, আমি শিখবে সবাই এর ফুল স্ট্যাক ওয়েব ডেভেলপমেন্ট করছে ভর্তি হয়ে যাই। কোডিং এর বিষয়ে কোনো ধারণা না থাকা একজন হয়ে, মেন্টরের সঠিক নির্দেশনা নিয়ে ধীরে ধীরে আমি নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করি। কোর্স চলাকালীন Fiverr-এ কাজ পাওয়া থেকে শুরু করে, ক্লায়েন্ট হ্যান্ডলিং, কাজের বিবরণ বোঝা, ভবিষ্যত ক্যারিয়ার ম্যাপিং সব সাপোর্ট আমি শিখবে সবাই থেকেই পেয়ে যাই, যা ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটপ্লেসে কাজ পাওয়ার বিষয়ে আমায় সহযোগিতা করেছে।
বর্তমানে আমি Fiverr, LinkedIn মার্কেটপ্লেসে সফলতার সাথে কাজ করে যাচ্ছি। একই সাথে USA এর কোম্পানিতে ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কাজ করছি। Fiverr-এ, আমার গড় বিক্রয় মূল্য ৮৫ ডলারের বেশি। আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে, “It’s never too late. There is always time to start what we wanted to start.”
বর্তমান সময়ে তরুনদের বেকারত্ব দূরীকরণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ফ্রিল্যান্সিং। একটি বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী দেশে বর্তমানে ৫ লক্ষের অধিক ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। ফ্রিল্যান্সিং কোনো সহজ কিছু নয় যে রাত জেগে বসে থাকলে ডলার আসতে শুরু করবে। এখানে প্রয়োজন পরিশ্রম, অধ্যবসায় এবং মেন্টর এর সঠিক নির্দেশনা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের মতো শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন সেক্টরে দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষন দিয়েছে। গ্রাফিক ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, পিএইচপি এবং লারাভেল, মোশন গ্রাফিক্স, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মতো আরো বেশ কিছু কোর্স করিয়ে থাকে শিখবে সবাই।
এছাড়াও বেশ কিছু সামাজিক উন্নয়ন প্রজেক্ট নিয়েও কাজ করে চলেছে শিখবে সবাই। এর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য- দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল মার্কেটিং প্রশিক্ষন, সুবিধাবঞ্চিত কিশোর-কিশোরীদের গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রশিক্ষণ।
অফলাইন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি অনলাইন প্রশিক্ষণকে সমান অগ্রাধিকার এবং কোর্স পরবর্তী নিরবিচ্ছিন্ন সাপোর্ট সেবা সারা দেশে প্রদান করে চলেছে শিখবে সবাই। যা শিখবে সবাই এর স্লোগান “বাদ যাবে না কেউ, শিখবে সবাই” এর স্বার্থকতা বহন করে। এছাড়াও আগামী সময়ে শিখবে সবাই দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে তাদের সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করতে যাচ্ছে। যে সাপোর্ট সেন্টারগুলো তে গিয়ে শিখবে সবাই এর সকল শিক্ষার্থীরা কোর্স চলাকালীন এবং কোর্স পরবর্তী সাপোর্ট পেয়ে যাবেন, যা তাদের দক্ষতা অর্জনকে আরো সহজতর করবে বলে মনে করছে শিখবে সবাই এর চীফ অপারেটিং অফিসার জনাব আব্দুল কাদের।