রাজধানী ঢাকায় পানিতে গন্ধ থাকায় ফুটিয়ে পান করার কারণে অনেকেই নির্ভর করে ঢাকা ওয়াসার এটিএম বুথের বিশুদ্ধ পানিতে। যে পানি ফুটানো ছাড়াই পান করা যায়। কিন্তু এবার সেই পানির দাম বাড়ানো হয়েছে ৭৩ শতাংশ। যেখানে আগে এক লিটার পানি ৪৬ পয়সায় পাওয়া যেত। সে পানি এখন ৮০ পয়সা লিটার কিনতে হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার থেকে এ মূল্য কার্যকর হয়েছে।
ঢাকা ওয়াসার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে’ ওয়াটার এটিএম বুথের পানির দাম বাড়ানো হয়েছে। প্রতি লিটার পানির মূল্য ৭০ পয়সা ধার্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হবে ১০ পয়সা ভ্যাট। এর আগে এই পানি ভ্যাটসহ ৪৬ পয়সায় বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়াটার এটিএম বুথ প্রকল্পের পরিচালক ও ঢাকা ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী রামেশ্বর দাস বলেন, শুরুতে শহরের নিম্নবিত্ত শ্রেণির লোকজনকে বিশুদ্ধ পানি দেওয়ার লক্ষ্যে এটিএম বসানো হয়েছিল। এটিএমের পানির মানের কারণে এখন সব শ্রেণির লোকজনই গ্রাহক হচ্ছেন। এই পানির গুণমান বোতলজাত পানির মতোই। তবে কী কারণে পানির দাম ৭৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে তা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন রামেশ্বর দাস। ২০১৭ সালের মে মাসে নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কম দামে নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে রাজধানীর মুগদায় প্রথম ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করা হয়। এ কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ড্রিংকওয়েলের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ওয়াসা। পরে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী শহরের বিভিন্ন জায়গায় তারা বুথ বসানো শুরু করে। ভূগর্ভ থেকে উত্তোলিত পানি পরিশোধনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয় এসব এটিএম বুথে।
ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ২৯৫টি ওয়াটার এটিএম বুথ স্থাপন করেছে ঢাকা ওয়াসা ও যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) ড্রিংকওয়েল। ব্যাংকের এটিএম কার্ডের মতো একটি আরএফআইডি কার্ড মেশিনের নির্দিষ্ট স্থানে রাখলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেরিয়ে আসে বিশুদ্ধ খাবার পানি। কার্ডে ১০ টাকা থেকে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করতে পারবেন গ্রাহক। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত পানি সংগ্রহ করা যায়। এই সেবা পেতে পানির এটিএম বুথের গ্রাহকসংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এখন এটিএম বুথের কার্ডের গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৯০ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১৪ লাখ লিটার পানি বিক্রি হচ্ছে।
মিরপুরের বাসিন্দা সাহেলা আক্তার বলেন, ওয়াসা বাসাবাড়িতে যে পানি সরবরাহ করে তা সরাসরি পান করা যায় না। ফুটিয়ে পান করতে গেলেও অনেক সময় পানির ওপর ফেনা ওঠে। এ পানি ফোটাতেও গ্যাসের বিল দিতে হয়। এছাড়া পানি বিশুদ্ধ করতে সময় ব্যয় হয় এবং ঝুঁকিও থাকে। তাই দুই বছর ধরে ওয়াসার ওয়াটার এটিএম বুথ থেকে বিশুদ্ধ পানি পান করছি। বোতলজাত পানির মতোই স্বাদ। তবে এখন যদি পানির দাম লাফিয়ে বাড়তে থাকে তা নিম্ন আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে যাবে। এ নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ওয়াটার এটিএম বুথগুলো মূলত ওয়াসার পানির পাম্প সংলগ্ন এলাকায় বসানো হয়েছে। গভীর নলকূপ থেকে পানি তুলে নির্ধারিত পাত্রে রাখা হয়। সেখানে পানি পরিশোধন করে তা এটিএমে আসে। পরে কার্ড ঢোকানোর পর নির্ধারিত বোতাম চাপলে পানি পড়তে শুরু করে। পানি নেওয়া শেষে কার্ডটি সরিয়ে ফেললে পানি আসাও বন্ধ হয়ে যায়।